বিড়িখোর বন্ধু
একবার এক শিক্ষা সফরে গিয়ে দুষ্টু ছেলে-পুলের পাল্লায় পরে বিড়িতে দু-এক টান দিয়েছিলাম!
ওই শিক্ষা সফরে গিয়ে বিড়ি খাওয়ার উপর আমার ভালো একটা শিক্ষা হয়েছে।
কিছু বন্ধু আছে এমন, যাদের হাজী সাহেবের কাচ্চি বিরিয়ারী খাওয়ালেও এত খুশি হয় না যতটা না খুশি হয় ওই মুরগীর দোকানের পাশের টং দোকানের একটা বিড়ি খাওয়ালে।
আরেক বিড়িখোর বিজ্ঞ বন্ধু যুক্তি দিয়ে বলছে, “দেখ দোস্ত, তোর চোখে বিড়ি একটা খারাপ জিনিস। তাই না? তো এ খারাপ জিনিসটারে পুরে ছাই বানায়া তো আমরা একটা ভালো কাজ করি।” হের যুক্তি শুইন্না কয়লাম দোস্ত তুই আরেকখান বিড়ি খা! পয়সা যা লাগে আমি দিমু!
আরেক বন্ধু বিড়ি টানতে টানতে কইল, দোস্ত গত বছর বাপের সামনে কান ধরে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর সিগারেট খামু না! সে প্রতিজ্ঞা আজও ভাঙ্গি নাই।
আমি কইলাম, কি কও বন্ধু? তুমি তো এখনো বিড়িতে টান মারতেছো! সে কহিলো, আরে বেটা এটা কি সিগারেট নাকি, এটা তো বিড়ি!!
বিড়িখোর বন্ধুরা লক্ষ টাকার হিসেব সেকেন্ডে করে। তাদের সার্ফ ব্রেনের কাছে গুগল মামা ফেল! বারেক ওবামা থেকে রানী এলিজাবেথ পর্যন্ত তাদের লিংক থাকে। তাদেরও নাকি বিভিন্ন পারিবারিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য আমার এইসব বন্ধুদের নিকট ধন্যা দিতে হয়!
এবারের বাজেটে বিড়ির দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে।
দিন দিন বিড়ির দাম যে হারে বাড়তেছে। সেদিক বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর নোটিস হওয়া উচিত, “এখানে সরল সুদে বিড়ি কিনার লোন দেয়া হয়।” অথবা বিড়ির দোকানের নোটিশ, “এখানে সহজ কিস্তিতে বিড়ি বিক্রি করা হয়।” অনেকে আবার রাইড শেয়ারিং এর মত বিড়ি শেয়ারিং অ্যাপস এর কথাও বলেছেন।
সত্যি বলতে কি, বিড়ি খাওয়া শৈল্পিক একটা ব্যাপার। এ পর্যন্ত কোন কৃপণ বিড়িখোর বন্ধু দেখি নাই! বিড়ি খাওয়া দোস্তরা এককেটা লিজেন্ড! এরা মনের দিক দিয়ে অনেক পিওর, সরল মনা এবং বন্ধত্বপরায়ণ!
বিড়ি খাইতে খাইতে এরা মনের সব দু:খের কথা বলে ফেলে।
বিড়িখোর বন্ধুদের সব দু:খ বিড়ির আগুনে ছাই হয়ে উড়ে যায় ওই নীল আকাশে…।
লেখাটি ০১-০৭-২০১৯ তারিখে দৈনিক সমকাল ফিচার “প্যাঁচালে” প্রকাশিত
Leave a Reply